ভয়েস এশিয়ান, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০।। সরকার কয়েক বছরের মধ্যে বিদেশ থেকে ব্যবহৃত গাড়ি বা রিকন্ডিশনড গাড়ি আমদানি বন্ধ করে দেয়ার যে পরিকল্পনা করছে, তাতে উদ্বেগ জানিয়েছে ব্যবহৃত গাড়ি আমদানিকারকদের সংগঠন বারভিডা।
রোববার শিল্প মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করে বারভিডার নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন, দেশীয় গাড়ির শিল্প কারখানা গড়ে উঠুক, তারা এটি চান। পাশাপাশি ক্রেতাদের ''চয়েসের'' স্বাধীনতাও রাখা উচিত।
তবে সরকার বলছে, কিছু ব্যবসায়ী এতে আপত্তি করলেও দেশের স্বার্থে এটা করা জরুরি।
প্রস্তাবিত খসড়া নীতিমালায় যা বলা হয়েছে
সরকার যে 'অটোমোবাইল ইন্ড্রাস্ট্রি ডেভেলপমেন্ট পলিসি-২০২০' খসড়া তৈরি করেছে, সেখানে প্রস্তাব করা হয়েছে যে, স্থানীয়ভাবে সংযোজিত গাড়ির বাজার তৈরি করার লক্ষ্যে ব্যবহৃত গাড়ির আমদানি আস্তে আস্তে কমিয়ে দেয়া হবে।
এভাবে ছয় বছরের মধ্যে সব ধরণের রিকন্ডিশনড গাড়ি আমদানি বন্ধ করে দেয়া হবে।
বর্তমানের পাঁচ বছর পর্যন্ত পুরনো গাড়ি আমদানি করা যায়।
ওই প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, দ্বিতীয় বছর থেকে তিন বছরের বেশি পুরনো গাড়ি আমদানি বন্ধ করে দেয়া হবে। তৃতীয় বছর থেকে তিন বছরের বেশি পুরনো গাড়ি আমদানি বন্ধ, চতুর্থ বছর থেকে দুই বছরের বেশি পুরনো এবং পঞ্চম বছর থেকে এক বছরের বেশি পুরনো গাড়ি আমদানি বন্ধ করে দেয়া হবে।
ষষ্ঠ বছর থেকে পুরোপুরি রিকন্ডিশনড গাড়ি আমদানি বন্ধ করে দেয়া হবে।
প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, দেশি সংযোজিত গাড়ির বাজার উৎসাহিত করতে পুরনো গাড়ির ওপর ১০ শতাংশের বেশি অবচয় হিসাব করা যাবে না।
দেশি সংযোজিত গাড়ির কিনতে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে নানা প্রকল্পে সহায়তা করবে সরকার।
বর্তমানে সরকারিভাবে প্রগতি ইন্ড্রাস্ট্রিজ জাপানি কোম্পানি মিতৎসুবিসির নকশায় গাড়ি সংযোজন করে থাকে। এছাড়া পিএইচপি মোটরস নামের চট্টগ্রাম ভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠান মালয়েশিয়ার প্রোটন গাড়ির সংযোজন করছে।
গাড়ি সংযোজন কারখানা গড়ে তোলার আগ্রহ দেখিয়েছে ভারতীয় টাটা এবং মাহিন্দ্রা এন্ড মাহিন্দ্রা কোম্পানিও।
রিকন্ডিশনড গাড়ি আমদানিকারকদের উদ্বেগ
বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ডড ভেহিকেল ইমপোর্টারস এন্ড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বারভিডা) বলছে, দেশে গাড়ি উৎপাদন বা সংযোজনের উদ্যোগকে তারা স্বাগত জানাচ্ছেন। কিন্তু ক্রেতাদের চাহিদা বা পছন্দের অধিকারও যেন অক্ষুণ্ন থাকে।
রোববার মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে তারা সেই বিষয়টি তুলে ধরেছেন।
বারভিডার সভাপতি আবদুল হক বলছেন, ''আমরা বলেছি, আমাদের চেয়ে অনেক উন্নত দেশে গাড়ি তৈরির পাশাপাশি পুরনো গাড়ি আমদানি হয়। আমরা গাড়ি উৎপাদনের বিরোধী নই, সেটাকে স্বাগত জানাই। কিন্তু গ্রাহকদের পছন্দ, চাহিদার বিষয়টিও যেন বজায় থাকে।''
''ফেজআউটের কথাটা যথাযথ হয় না। আমাদের বাজারটা বড় নয়। কোন একটা কোম্পানি বা একটা দুইটা কোম্পানি এতো গাড়ি তৈরি করতে পারে না। উৎপাদন করতে গিয়ে একটা প্রতিষ্ঠিত ব্যবসা, যেখানে হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান, বিনিয়োগ আছে, সেটা যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।'' তিনি বলছেন।
বারভিডার হিসাবে বাংলাদেশে প্রতিবছর যাত্রীবাহী ১৫ হাজার গাড়ির চাহিদা রয়েছে। সেই চাহিদার ৮৫ শতাংশই রিকন্ডিশনড গাড়ি পূরণ করে।
দেশে মূলত জাপান থেকে ব্যবহৃত গাড়ি আমদানি করা হয়। এসব গাড়িতে পাঁচ বছর পর্যন্ত অবচয় সুবিধা পাওয়া যায়। জাপানের মানে তৈরি হওয়া এসব গাড়ি টেকসই হওয়ায় বাংলাদেশের মানুষের কাছে পুরনো বা ব্যবহৃত হলেও এসব গাড়ির জনপ্রিয়তা রয়েছে।
এই খাতে বিশ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ আর ৩০ হাজার মানুষ কর্মরত রয়েছেন বলে বারভিডা জানিয়েছে।
মিরপুরের মুনমুন চৌধুরী এরকমই রিকণ্ডিশনড গাড়ি কিনেছেন। তিনি বলছেন, ''নতুন গাড়ির দামের চেয়ে এই গাড়ির দাম কম। আমার বন্ধু-আত্মীয়স্বজনরাও রিকন্ডিশনড গাড়ি কিনতে পরামর্শ দিয়েছেন। একে দাম কম, আবার টেকসই। সেই বিশ্বাসের কারণেই আমি রিকন্ডিশড গাড়ি কিনেছি।''
তবে শিল্প মন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন বলছেন, ''কোন একটি জায়গা থেকে তো আমাদের শুরু করতে হবে। যখন কিছু শুরু হয়, তখন অনেক আপত্তি আসে। আমাদের গাড়ির বাজার যথেষ্ট বড় হয়ে গেছে। অনেক কিছুতে আমরা সক্ষমতা অর্জন করেছি। এখন নিজেরা করা উচিত।''
তবে মানুষের গাড়ি বেছে নেয়ার সুযোগ সীমিত হয়ে যাচ্ছে কিনা জানতে চাইলে শিল্প মন্ত্রী বলছেন, ''চয়েস কেন সীমিত হবে? নতুন গাড়ি আসবে, পুরনো গাড়ির কেনার চেয়ে মানুষ নতুন গাড়ি কিনবে।'' বিবিসি