ভয়েস এশিয়ান, ২৫ মে, ২০২৩।। কোরবানির ঈদের বাকি আরও এক মাসের বেশি। কিন্তু এর মধ্যেই বিভিন্ন মসলার দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। মাত্র এক মাসের ব্যবধানেই কোনো কোনো মসলার দাম বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। বিশেষ করে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে আদার দাম আকাশ ছুঁয়েছে। এক মাস আগেও আমদানি করা যে আদা ২০০ থেকে ২২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হতো তা এখন বিক্রি হচ্ছে ৪৮০ থেকে ৫০০ টাকায়। আর ৩০ টাকায় বিক্রি হওয়া পেঁয়াজ পৌঁছেছে ৮০ টাকায়। দাম বেড়েছে জিরা, এলাচ ও গোলমরিচেও। এসব মসলার দাম কেজিতে ১০০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। আদার দাম বাড়ার বিষয়ে ব্যবসায়ীদের দাবি, গত এক মাস ধরে চীন থেকে আদা আমদানি বন্ধ। ভারত, ইন্দোনেশিয়া ও ভিয়েতনাম থেকেও আমদানি হচ্ছে কম।
তবে ক্রেতা ও ভোক্তা অধিকার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে কোনো পণ্যের দাম বাড়াতে সরবরাহ সংকটের দরকার হয় না। ব্যবসায়ীরা তাদের ইচ্ছেমতো জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দেন। কিন্তু সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় একই কাজ বারবার করেন তারা। আদার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। চীন থেকে আদা না এলেও মিয়ানমার থেকে প্রচুর আদা আসছে দেশে। তদরকির অভাবেই ভোক্তাদের ভোগান্তি হয়।
গত মঙ্গলবার রাজধানীর শ্যামবাজার, কারওয়ান বাজার, হাতিরপুল ও মগবাজার এলাকার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি চীনা আদা বিক্রি হচ্ছিল ৫০০-৫৫০ টাকায়। তিন দিন আগেও আদা বিক্রি হয়েছে ৪৬০ এবং এক মাস আগে চীনা আদার কেজি ছিল ২২০ টাকা। প্রতি কেজি বার্মিজ ৩৫০ থেকে ৩৮০, ইন্দোনেশিয়ার ৩৮০-৪০০, ভিয়েতনামের ৩০০ ও দেশি আদা ৩৫০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
আদার দামের বিষয় জানতে চাইলে কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী ইমাম আলী বলেন, শ্যামবাজারে আদার দাম বেশি পড়ায় কারওয়ান বাজারে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। এ বাজারে অনেক ব্যবসায়ী শ্যামবাজার থেকে আদা কেনেন। বাজারে এখন চায়না আদার সংকট দেখা দিয়েছে। পাইকারদের কাছে চায়না আদা নেই। দুয়েকজনের কাছে পাওয়া যাচ্ছে। তারাও কেজিপ্রতি ৫৫০-৬০০ টাকা দাম হাঁকাচ্ছেন।
শ্যামবাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজারে চায়না আদা নেই। হাতেগোনা কয়েকজনের কাছে পাওয়া গেলেও তারা প্রতি কেজি চায়না আদার দাম হাঁকাচ্ছেন ৫০০-৫২০ টাকা করে।
জানতে চাইলে শ্যামবাজারের নূর মসলা বিতানের ম্যানেজার মোহাম্মদ মিলন বলেন, দেশে এ বছর আদার উৎপাদন কম হয়েছে। আমদানিও কম হয়েছে। এজন্য দাম অনেক বেশি। কোরবানি ঈদের আগে আদার দাম কমার সম্ভাবনা নেই। ঈদের আগে চীন থেকে আদা আমদানি না হলে পাইকারিতেই প্রতি কেজি আদা ৪০০ টাকা করে বিক্রি করতে হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মসলার উন্নত জাত ও প্রযুক্তি সম্প্রসারণ প্রকল্পের পরিচালক রাসেল আহমেদ বলেন, অন্যান্য ফসলের থেকে মসলাজাত পণ্য আদার ফলন কম হয়ে থাকে। তবে আমাদের প্রকল্পের অংশ হিসেবে রাজশাহী, দিনাজপুর ও মানিকগঞ্জসহ অন্যান্য জেলার নতুন করে আদার চাষ শুরু হয়েছে। যা আগামী অর্থবছরে চাহিদার কাছাকাছি পৌঁছাতে পারব বলে আশা করছি।
তিনি বলেন, দেশে আদার চাহিদা প্রায় ৩ লাখ ৭১ হাজার টন। গত অর্থবছরে দেশে আদার উৎপাদন ছিল ২ লাখ ৪৫ হাজার টন। এ বছর উৎপাদন কমে হয়েছে। তবে আগামী অর্থবছরে চাহিদার বেশিরভাগ আদা উৎপাদন হবে বলে বিশ্বাস করছি। আদা যেহেতু দীর্ঘমেয়াদি ফসল, যার ফলে আমরা সাথী ফসল হিসেবে আদার চাষের জন্য কৃষকদের আগ্রহী করে তুলছি। তারই অংশ হিসেবে ফল বাগানগুলোতে বস্তা পদ্ধতিতে আদা চাষ করছি। দেশের মানুষের কাছে মোটা আদার চাহিদা থাকায় আমরা পাহাড়ি আদার চাষ করছি।
এদিকে মসলার বাজার ঘুরে দেখা যায়, লবঙ্গ ও দারুচিনি আগের দামে বিক্রি হচ্ছে। তবে জিরা, এলাচ ও গোলমরিচের দাম বেড়েছে ১০০-৪০০ টাকা পর্যন্ত। ৪০০ টাকা বেড়ে জিরার কেজি বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার টাকায়। গোলমরিচের কেজিতে ১০০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৯৫০-১০০০ হাজার টাকা করে। ইন্ডিয়ান এলাচ কেজিতে ১ হাজার টাকা বেড়েছে। বর্তমানে প্রতি কেজি এলাচ বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার টাকা করে। যা কয়েক দিন আগেও ৩ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। অন্যান্য এলাচের মধ্যে মানভেদে ভিয়েতনামের এলাচের কেজিপ্রতি ১০০-১৫০ টাকা বেড়েছে। বর্তমানে প্রতি কেজি এলাচ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকায়।
শিপমেন্ট ভাড়া ও আন্তর্জাতিক বাজারে জিরা, গোলমরিচ ও এলাচের দাম বৃদ্ধির কারণ দাবি করে ব্যবসায়ীরা বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে মসলার দাম বাড়ায় দেশের বাজারে এর প্রভাব পড়েছে। বর্তমানের এলাচ ও জিরার কেজিতে ২০০-৩০০ টাকা বেড়েছে।
কারওয়ান বাজারের শরীয়তপুর স্টোরের স্বত্বাধিকারী আক্তার হোসেন বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে মসলার মধ্যে জিরা ও ভারতীয় এলাচের দাম বেড়েছে। আমদানিকারকদের কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে তারা জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে এ মসলার দাম বেড়েছে। তাই দেশের বাাজরেও এর প্রভাব কিছুটা পড়তে শুরু করেছে।
হঠাৎ করে মসলার বাজার অস্থির হওয়ার বিষয় জানতে চাইলে ক্যাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন বলেন, ‘আমাদের ব্যবসায়ীরা অতিমুনাফাখোর। বরাবরের মতো তাদের নানা অজুহাত থাকেই। বাজারে বিক্রি হওয়া ৫০০ টাকার আদা তারা আমদানি করেছে মাত্র ৫৮ টাকা করে। কিন্তু সরকার মুনাফাখোর ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।’