ভয়েস এশিয়ান, ২৬ মার্চ, ২০২৩।। ‘স্বাধীনতা তুমি/মজুর যুবার রোদে ঝলসিত দক্ষ বাহুর গ্রন্থিল পেশী। স্বাধীনতা তুমি/অন্ধকারের খাঁ খাঁ সীমান্তে মুক্তিসেনার চোখের ঝিলিক।’ আজ ২৬ মার্চ, আজ সেই গৌরবোজ্জ্বল মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। একাত্তরের এই দিনে স্বাধীনতা ও মুক্তির চেতনায় জেগে ওঠা এ জনপদের মানুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে ও নেতৃত্বে মরণপণযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। রচিত হয় নতুন এক ইতিহাস, পৃথিবীর বুকে মাথা তুলে দাঁড়ায় নতুন এক রাষ্ট্র।
এর আগে একাত্তরের ঐতিহাসিক ৭ মার্চেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আহ্বান জানান জাগ্রত জনগণের প্রতি স্বাধীনতা ও মুক্তির চূড়ান্ত সংগ্রামের প্রস্তুতি নেওয়ার। তখন আলোচনার নামে কালক্ষেপণের পাশাপাশি পাকিস্তানি সামরিক জান্তা গোপনে প্রণয়ন করে গণহত্যার নীল নকশা ‘অপারেশন সার্চলাইট’।
২৫ মার্চের কালরাতে এই নীলনকশা অনুযায়ী গণহত্যা শুরু করে পাকিস্তানি সেনারা। গ্রেপ্তার করা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। তবে গ্রেপ্তারের আগেই আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন অবিসংবাদিত এই নেতা।
এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশের এই ৫৩তম মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে বাঙালিসহ এ দেশের সকল সংখ্যালঘু জাতিসত্তার মানুষ ফিরে তাকাবে গৌরবোজ্জ্বল সেই অধ্যায়ের দিকে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশকে এগিয়ে নেওয়ার শপথ নেবে নতুন করে।
আজ সরকারি ছুটির দিন। দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের জন্য সরকারি পর্যায়ে দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, পেশাজীবী এবং সাংস্কৃতিক সংগঠনও নানা কর্মসূচি পালন করবে।
দিবসটি পালন উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। আজ ভোরে রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে একাত্তরের বীর শহীদদের স্মৃতির বেদিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন।
এরপর আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, সিপিবি, জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি, গণফোরামসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, পেশাজীবী সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে। লাখো জনতা স্মৃতিসৌধে মিলিত হয়ে গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করবে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের। দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে সংবাদপত্রগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে।
বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র এবং চলচ্চিত্র প্রদর্শন করবে।
এ ছাড়া মহানগর, জেলা ও উপজেলায় বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং শহীদ পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা দেওয়া হবে। বাংলাদেশ ডাক বিভাগ স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করবে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোয় দেশের শান্তি, সমৃদ্ধি ও অগ্রগতি কামনা করে বিশেষ দোয়া, প্রার্থনা ও উপাসনার আয়োজন করা হবে। দেশের সকল শিশুপার্ক ও জাদুঘর বিনা টিকিটে উন্মুক্ত রাখা হবে।
২৬ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘোষণায় স্বাধীনতা অর্জনের জন্য বাঙালি ও সংখ্যালঘু জাতিসত্তাগুলোর যে চূড়ান্ত লড়াই শুরু হয়েছিল, সে পথের প্রতিটি পদক্ষেপে আছে জাতির সূর্যসন্তানদের আত্মদান আর রক্তস্রোত। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ও সামরিক বাহিনীকে পরাস্ত ও আত্মসমর্পণে বাধ্য করতে শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে লড়েছে বীর বাঙালি। দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী মাথা নত করেছে বীর জনগণের অদম্য প্রত্যয়ের কাছে।
স্বাধীনতা অর্জনের পর ৫২ বছরের রাজনৈতিক অভিযাত্রায় জনগণকে পেরোতে হয়েছে অনেক চড়াই-উতরাই। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যা করে, সামরিক শাসন জারি করে, সংবিধানকে স্থগিত ও পাল্টে দিয়ে রাষ্ট্রের গতিপ্রবাহ ও মুক্তিযুদ্ধের ঈপ্সিত লক্ষ্যই পাল্টে দিতে চেয়েছে প্রতিক্রিয়াশীল চক্র। কিন্তু বারবার এ অপচেষ্টার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে গণতন্ত্রকামী মানুষ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় শাণিত জনগণ। এবারের স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসেও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পথে এগিয়ে যাওয়ার ব্রত নেবে এ দেশের মানুষ।