| ঢাকা, বাংলাদেশ | সোমবার, ২৭ মার্চ ২০২৩ |
1678090252.png 1647622201.jpg

বিভাগ : বিশেষ প্রতিবেদন তারিখ : ১৭-০৩-২০২৩

বঙ্গবন্ধু দুর্নীতির বিরুদ্ধেও জিহাদ ঘোষণা করেছিলেন


  ইঞ্জি. মোশাররফ জুয়েল (এডিটর এন্ড সিইও- ভয়েস এশিয়ান, প্রোগ্রাম প্ল্যানার- বিটিভি)


ভয়েস এশিয়ান, ১৭ মার্চ, ২০২৩।। স্বাধীনতার পর দেশকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করার সংগ্রামের পাশাপাশি ঘুষ-দুর্নীতির বিরুদ্ধে নতুন সংগ্রামের ডাক দেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। দুর্নীতির বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু কতটা সোচ্চার ছিলেন তা আলোচনায় এসেছে সামান্যই। বঙ্গবন্ধুর ভাষণগুলো লক্ষ করলে দেখা যায়, ঘুষ-দুর্নীতির বিরুদ্ধে তরুণ বয়স থেকে শুরু করে জীবনের শেষ পর্যন্ত সোচ্চার ছিলেন তিনি। তিনি দুর্নীতিকে দেশের এক নম্বর সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন। দুর্নীতি নির্মূল ও দুর্নীতিবাজাদের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর সেই কাজ অসমাপ্ত থেকে গেছে ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্টের নির্মম হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে। এত বছর পরও এ দেশে এখনো ঘুষ-দুর্নীতির সর্বগ্রাসী রূপ পরিলক্ষিত হচ্ছে। এর মধ্যে দুর্নীতিতে বিশ্বে চ্যাম্পিয়নও হয়েছে এই দেশ। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা এখন দেশ পরিচালনা করছেন। দুর্নীতির বিরুদ্ধে তিনিও সোচ্চার।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসংখ্য ভাষণের মধ্য থেকে চারটি ভাষণের ওপর আলোকপাত করা হলো এখানে। সেই ভাষণগুলোতে ঘুষ-দুর্নীতির বিরুদ্ধে এই মহান নেতার কণ্ঠে উচ্চারিত হুঁশিয়ারির অনেকগুলোই এখনো প্রাসঙ্গিক।

পোস্ট-কার্ডে দুর্নীতিবাজদের নাম লিখে পাঠানোর আহ্বান

পাকিস্তান আমলে ১৯৫৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে মুসলিগ লীগের বিরুদ্ধে বিজয়ী হয় আওয়ামী লীগসহ কয়েকটি দল নিয়ে গঠিত যুক্তফ্রন্ট। ১৯৫৬ সালে কোয়ালিশন সরকারে মন্ত্রিত্ব পেয়েছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁর হাতে ছিল শিল্প, বাণিজ্য, শ্রম, দুর্নীতি দমন ও ভিলেজ এইড দপ্তর। বাঙালির এই অবিসংবাদিত নেতা সেই তরুণ বয়সেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাঁর স্পষ্ট অবস্থান ঘোষণা করেছিলেন। ওই বছরের সেপ্টেম্বর মাসে পিরোজপুর শহরের গোপালকৃষ্ণ টাউন ক্লাব মাঠে পিরোজপুর মহকুমা আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক জনসভায় তিনি বলেন, ‘...কোনো অফিস-আদালতে দুর্নীতি হলে এবং আপনাদের নিকট কেউ ঘুষ চাইলে সঙ্গে সঙ্গে তিন পয়সার একটি পোস্ট-কার্ডে লিখে আমাকে জানাবেন। আমি দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করব, যাতে দুর্নীতি চিরদিনের জন্য বন্ধ হয়ে যায়।’

‘ঘুষখোরদের আমি ক্ষমা করব না’

মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি স্বদেশে ফিরে আসেন বঙ্গবন্ধু। সদ্যঃস্বাধীন দেশে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কয়েক লাখ ভক্ত-অনুরাগীর সামনে দেওয়া ভাষণে স্বাধীনতার সার্থকতা ব্যাখ্যা করার পাশাপাশি দুর্নীতির বিরুদ্ধে নিজের অবস্থান ঘোষণা করেন। আবেগাপ্লুত জাতির জনক বলেন, ‘আজ থেকে আমার অনুরোধ, আজ থেকে আমার আদেশ, আজ থেকে আমার হুকুম—ভাই হিসেবে, নেতা হিসেবে নয়, প্রেসিডেন্ট হিসেবে নয়, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নয়, আমি তোমাদের ভাই, তোমরা আমার ভাই, এই স্বাধীনতা ব্যর্থ হয়ে যাবে যদি আমার বাংলার মানুষ পেট ভরে ভাত না পায়। এই স্বাধীনতা আমার পূর্ণ হবে না যদি আমার বাংলার মা-বোনেরা কাপড় না পায়। এই স্বাধীনতা আমার পূর্ণ হবে না যদি এ দেশের মানুষ, যারা আমার যুবক শ্রেণি আছে তারা চাকরি না পায় বা কাজ না পায়।...যথেষ্ট কাজ পড়ে রয়েছে। আপনারা জানেন, আমি সমস্ত জনগণকে চাই, যেখানে রাস্তা ভেঙে গেছে, নিজেরা রাস্তা করতে শুরু করে দেও। আমি চাই জমিতে যাও, ধান বোনাও, কর্মচারীদের বলে দেবার চাই, একজনও ঘুষ খাবেন না, ঘুষখোরদের আমি ক্ষমা করব না।’

‘চোরের শক্তি বেশি না ঈমানদারের শক্তি বেশি’

জনগণের পাশাপাশি তরুণ সেনা কর্মকর্তাদের উদ্দেশে দেওয়া ভাষণেও বঙ্গবন্ধু দুর্নীতির দুর্বিষহ অবস্থা তুলে ধরেন। দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করে তাতে জয়ী হওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। ১৯৭৫ সালের ১১ জানুয়ারি কুমিল্লা সেনানিবাসে অস্থায়ী বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি প্রাঙ্গণে একটি ব্যাচ পাসিং আউট প্যারেডে প্রধান অতিথির বক্তৃতা বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘...এত রক্ত দেওয়ার পরে যে স্বাধীনতা এনেছি, চরিত্রের পরিবর্তন অনেকের হয় নাই। এখনো ঘুষখোর, দুর্নীতিবাজ, চোরকারবারি, মুনাফাখোরী বাংলার দুঃখী মানুষের জীবনকে অতিষ্ঠ করে দিয়েছে। দীর্ঘ তিন বছর পর্যন্ত আমি এদের অনুরোধ করেছি, আবেদন করেছি, হুমকি দিয়েছি, চোরা নাহি শোনে ধর্মের কাহিনি। কিন্তু আর না।’

‘...বিদেশ থেকে ভিক্ষা করে আমাকে আনতে হয়, আর এই চোরের দল আমার দুঃখী মানুষের সর্বনাশ করে এভাবে লুটতরাজ করে খায়। আমি শুধু এমার্জেন্সি দিই নাই, এবারে প্রতিজ্ঞা করেছি, যদি ২৫ বছর এই পাকিস্তানি জালেমদের বিরুদ্ধে, জিন্নাহ থেকে আরম্ভ করে গোলাম মোহম্মদ, চৌধুরী মোহাম্মদ আলী, আইয়ুব খান, ইয়াহিয়া খানের বিরুদ্ধে বুকের পাটা টান করে সংগ্রাম করে থাকতে পারি, আর আমার ৩০ লক্ষ লোকের জীবন দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করতে পারি, তাহলে পারব না? নিশ্চয়ই ইনশাআল্লাহ পারব। এই বাংলার মাটি থেকে এই দুর্নীতিবাজ, এই ঘুষখোর, এই মুনাফাখোরী এই চোরাচালানকারীদের নির্মূল করতে হবে। আমিও প্রতিজ্ঞা নিয়েছি, তোমরাও প্রতিজ্ঞা নাও, বাংলার জনগণও প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করো। আর না, অধৈর্য, সীমা হারিয়ে ফেলেছি। এই জন্য জীবনের যৌবন নষ্ট করি নাই। এই জন্য শহীদরা রক্ত দিয়ে যায় নাই। কয়েকটি চোরাকারবারি, মুনাফাখোর, ঘুষখোর দেশের সম্পদ বাইরে বাইর করে দিয়ে আসে, ...মানুষকে না খাইয়া মারে। উত্খাত করতে হবে বাংলার বুকের থেকে এদের। দেখি কত দূর তারা টিকতে পারে। চোরের শক্তি বেশি না ঈমানদারের শক্তি বেশি, সেটাই আজ প্রমাণ হয়ে যাবে।’

‘এক নম্বর কাজ দুর্নীতিবাজদের বাংলার মাটি থেকে উত্খাত’

স্বাধীনতার পঞ্চম বার্ষিকীতে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ১৯৭৫ সালের ২৬ মার্চ তাঁর জীবনের শেষ জনসভায় ভাষণ দেন বঙ্গবন্ধু। পত্রিকায় প্রকাশিত ওই ঐতিহাসিক ভাষণের বিজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছিল যে জনসভায় ‘বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচির ব্যাখ্যা’ করবেন। ওই ভাষণজুড়েও ছিল দুর্নীতির বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর দৃঢ় উচ্চারণ। দেশের পরিস্থিতি এবং দুর্নীতি নির্মূলের জন্যই যে দেশের শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন সে ইঙ্গিত তিনি দিলেন তাঁর দীর্ঘ ভাষণে। দেশে বাকশাল প্রতিষ্ঠার পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘...আজ কে দুর্নীতিবাজ? যে ফাঁকি দেয় সে দুর্নীতিবাজ। যে ঘুষ খায় সে দুর্নীতিবাজ। যে স্মাগলিং করে সে দুর্নীতিবাজ। যে ব্ল্যাকমার্কেটিং করে সে দুর্নীতিবাজ। যে হোর্ড করে সে দুর্নীতিবাজ। যারা কর্তব্য পালন করে না তারা দুর্নীতিবাজ। যারা বিবেকের বিরুদ্ধে কাজ করে তারাও দুর্নীতিবাজ। যারা বিদেশের কাছে দেশকে বিক্রি করে তারাও দুর্নীতিবাজ। এই দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে আমাদের সংগ্রাম শুরু করতে হবে। আমি কেন ডাক দিয়েছি? এই ঘুণে ধরা ইংরেজ আমলের, পাকিস্তানি আমলের যে শাসনব্যবস্থা তা চলতে পারে না। একে নতুন করে ঢেলে সেজে গড়তে হবে।’

দুর্নীতিবাজদের খতম, দুর্নীতি নির্মূলকে জনগণের এক নম্বর কাজ হিসেবে চিহ্নিত করে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে নতুন সংগ্রামের ডাক দেন বঙ্গবন্ধু। আর এ জন্য জনগণের সহায়তা চাইলেন তিনি। অনলবর্ষী বক্তা বঙ্গবন্ধুর দৃঢ় উচ্চারণ, ‘সরকারি আইন করে কোনো দিন দুর্নীতিবাজদের দমন করা সম্ভব নয়, জনগণের সমর্থন ছাড়া। আজকে আমার একমাত্র অনুরোধ আপনাদের কাছে সেটা হলো এই, আমি বলেছিলাম প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে জেহাদ করতে হবে, যুদ্ধ করতে হবে শত্রুর বিরুদ্ধে। আজকে আমি বলব বাংলার জনগণকে, এক নম্বর কাজ হবে দুর্নীতিবাজদের বাংলার মাটি থেকে উত্খাত করতে হবে। আমি আপনাদের সাহায্য চাই। কেমন করে করতে হবে? আইন চালাব। ক্ষমা করব না। যাকে পাব ছাড়ব না। একটা কাজ আপনাদের করতে হবে। গণ-আন্দোলন করতে হবে। আমি গ্রামে গ্রামে নামব। এমন আন্দোলন করতে হবে, যে ঘুষখোর, যে দুর্নীতিবাজ, যে মুনাফাখোর, যে আমার জিনিস বিদেশে চোরাচালান দেয় তাদের সামাজিক বয়কট করতে হবে।...আপনারা সংঘবদ্ধ হোন। ঘরে ঘরে আপনাদের দুর্গ গড়তে হবে। সে দুর্গ গড়তে হবে দুর্নীতিবাজদের খতম করার জন্য, বাংলার দুঃখী মানুষের দুঃখ মোচন করার জন্য। এই দুর্নীতিবাজদের যদি খতম করতে পারেন তাহলে বাংলাদেশের মানুষের শতকরা ২৫ থেকে ৩০ ভাগ দুঃখ চলে যাবে। এত চোরের চোর, এই চোর যে কোথা থেকে পয়দা হয়েছে তা জানি না। পাকিস্তান সব নিয়ে গিয়েছে কিন্তু এই চোর তারা নিয়ে গেলে বাঁচতাম। এই চোর রেখে গিয়েছে। কিছু দালাল গিয়েছে, চোর গেলে বেঁচে যেতাম।...শিক্ষিতদের কাছে আমার একটা প্রশ্ন, আমি যে এই দুর্নীতির কথা বললাম, আমার কৃষক দুর্নীতিবাজ? না। আমার শ্রমিক? না। তাহলে ঘুষ খায় কারা? ব্ল্যাকমার্কেটিং করে কারা? বিদেশি এজেন্ট হয় কারা? বিদেশে টাকা চালান দেয় কারা? হোর্ড করে কারা? এই আমরা, যারা শতকরা ৫ জন শিক্ষিত। এই আমাদের মধ্যেই ঘুষখোর, দুর্নীতিবাজ।’

ভাষণের শেষ দিকে এসে জাতি হিসেবে আত্মমর্যাদার কথা স্মরণ করেন এবং জাতির অগ্রাধিকার কর্মসূচি ঘোষণা করেন বঙ্গবন্ধু। তিনি বলেন, ‘...একটা জাতি যখন ভিক্ষুক হয়, মানুষের কাছে হাত পাতে, আমারে খাবার দাও, আমারে টাকা দাও, সেই জাতির ইজ্জত থাকতে পারে না। আমি সেই ভিক্ষুক জাতির নেতা থাকতে চাই না।...এক নম্বর হলো—দুর্নীতিবাজ খতম কর, দুই নম্বর হলো—কলকারখানায়, ক্ষেতে-খামারে প্রডাকশন বাড়াও, তিন নম্বর হলো—পপুলেশন প্ল্যানিং, চার নম্বর হলো—জাতীয় ঐক্য। জাতীয় ঐক্য গড়ার জন্য একটি দল করা হয়েছে। যারা বাংলাকে ভালোবাসে, এর আদর্শে বিশ্বাস করে, চারটি রাষ্ট্রীয় আদর্শ মানে, সৎপথে চলে, তারা সবাই এ দলের সদস্য হতে পারবে। যারা বিদেশি এজেন্ট, যারা বহিঃশত্রুর কাছ থেকে পয়সা নেয়, এতে তাদের স্থান নাই।’





 

বিশেষ প্রতিবেদন

Mujibur Rahman Milon Cholti Pothe Iftar programme inaugurated

চলতি পথে ইফতার ২য় রোজায় নটরডেম কলেজের সামনে

মুজিবুর রহমান মিলনের চলতি পথে ইফতার বিতরণ কর্মসূচি উদ্বোধন

মুজিবুর রহমান মিলন রমজানে ৩০০০ পথচারী রোজাদারকে ইফতার করাবেন

আল জাজিরাকে প্রধানমন্ত্রী: রোহিঙ্গাদের কাজের সুযোগ দিতে পারবো না

শবে বরাত উপলক্ষে পুরান ঢাকায় হালুয়া-রুটি বিক্রির ধুম

বন্ধু উন্নয়ন সংস্থার উদ্যোগে বিনামূল্যে ৫৫ জন গরীব-দুস্থ রোগীর চোখের ছানি অপারেশন

বাংলাদেশের বৃহৎ বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে

প্রধানমন্ত্রীর গণভবন যেন এক টুকরো খামারবাড়ি, আজ উত্তোলন হলো ৪৬ মণ পেঁয়াজ

ঢাকার ৯০ ভাগ হিজড়াই নকল: পুলিশ

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের আরো খবর


1585646778.gif 1585646793.jpg 1585646805.gif

1615174445.gif

1670554646.jpg




Copyright © 2017-2023   |   Voice Asian - Asian Based News Portal
Contact: voiceasianinfo@gmail.com

   
StatCOUNTER