ভয়েস এশিয়ান, ২১ ডিসেম্বর, ২০২২।। কাতার বিশ্বকাপ আসরের সমাপ্তি হলেও এখনো রেশ কাটেনি বিশ্বকাপ ট্রফির। প্রায় এক মাসে উত্তেজনা-আমেজ-উন্মাদনা তো ছিলই। আবার যারা সরাসরি কাতার স্টেডিয়ামে বসে খেলা দেখতে পারেননি তারা বড় পর্দায় মুখিয়ে ছিলেন প্রতিটি ম্যাচ উপভোগের জন্য। এই সময়ে খেলার পাশাপাশি আলোচনায় ছিল কাতারে বিশ্বকাপ ফুটবলের জন্য হাজার কোটি টাকায় তৈরি করা জৌলুস ছড়ানো স্টেডিয়ামগুলো।
বিশ্বকাপ ফুটবল আয়োজন করতে কাতারের ১৭ লাখ ৬৮ হাজার ১৯০ কোটি টাকারও বেশি খরচ হয়েছে। যা এখন পর্যন্ত রেকর্ড।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৯৯৪ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ৭টি বিশ্বকাপ ফুটবলে মোট যে পরিমাণ খরচ হয়েছে, তার চার গুণেরও বেশি খরচ হয়েছে এবার কাতারের আয়োজনে। এই খরচ স্টেডিয়াম তৈরির জন্য হয়েছে।
বিশ্বকাপ ফুটবল আয়োজনে ৭টি নতুন স্টেডিয়াম তৈরি করেছে কাতার। ফুটবলারদের অনুশীলনের জন্যও পৃথক মাঠের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে লুসাইল স্টেডিয়াম। এখানে ফ্রান্স-আর্জেন্টিনার মধ্যকার ফাইনাল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
গত ১৮ ডিসেম্বর কাতার বিশ্বকাপ ফুটবলের পর্দা নামে। তাহলে এখন তো স্টেডিয়ামগুলোর প্রয়োজন নেই। বিশ্বকাপের জন্য তৈরি করা ৭ স্টেডিয়াম রয়েছে, তার মধ্যে একটি স্টেডিয়াম কাতারে রাখা হবে না।
স্টেডিয়াম ৯৭৪। কাতারে তৈরি ৭টি স্টেডিয়ামের মধ্যে একটি। দেশটির রাস আবু আবৌদ এলাকায় তৈরি এই বন্দর কাঠামোর স্টেডিয়ামে আসন সংখ্যা রয়েছে ৪৪ হাজারের বেশি। স্টেডিয়ামটি তৈরি হয়েছে জাহাজের পুনর্ব্যবহারযোগ্য পণ্যবাহী স্টিল কন্টেনার দিয়ে। অস্থায়ীভাবে তৈরি স্টেডিয়ামটি নির্মাণে ৯৭৫টি শিপিং কন্টেনার ব্যবহার হয়েছে। আবার দেশটির আন্তর্জাতিক ডায়ালিং কোডও +৯৭৪। এ কারণে স্টেডিয়ামের নাম দেয়া হয় ৯৭৪।
বিশ্বকাপের মাঝেই স্টেডিয়াম ৯৭৪ ভাঙার কাজ শুরু হয়। মডিউলার স্টেডিয়ামের একাংশ খুলে ফেলা হয়েছে। স্টেডিয়ামটি উদ্বোধন করা হয়েছিল ২০২১ সালের ৩০ নভেম্বর। বিশ্বকাপে মোট ৭টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছে এই মাঠে। গত ৫ ডিসেম্বর ব্যবহারের জন্য বন্ধ করা হয় স্টেডিয়ামটি।
যেসব দেশে পরিকাঠামো খারাপ সেসব দেশে স্টেডিয়ামের ভাঙা অংশগুলো পাঠানো হতে পারে। ধারণা করা হচ্ছে আফ্রিকার কোনো দেশে স্টেডিয়ামের অংশগুলো পাঠানো হবে। সেখানে খেলার জন্য নতুনভাবে গড়া হবে এই স্টেডিয়াম।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, বাকি স্টেডিয়ামগুলোর কী হবে? কাতারের প্রশাসন বলছে, লুসাইল স্টেডিয়ামে একটি স্কুল ও অনেকগুলো দোকান-ক্যাফে তৈরি করা হবে। খেলার জন্যও অনেক জায়গা থাকবে ওই স্টেডিয়ামে। পাশাপাশি একটি হাসপাতাল ও একটি কমিউনিটি হল তৈরি হবে স্টেডিয়ামের জায়গায়। বিশ্বকাপ ফুটবলের স্মৃতিতে একটি মিউজিয়াম তৈরি করার পরিকল্পনাও রয়েছে।
আল বায়ত স্টেডিয়ামে বিলাসবহুল একটি হোটেল, একটি শপিং মল এবং একটি ওষুধের দোকান হবে। খেলায় খেলোয়াড়দের যেসব ওষুধ ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সামগ্রীর প্রয়োজন হয় সেসব থাকবে ওই ওষুধের দোকানে। আর স্থানীয় দুটি ফুটবল ক্লাব ব্যবহার করবে দুটি স্টেডিয়াম। আল রাইয়ান খেলবে আহমেদ বিন আলি স্টেডিয়ামে এবং আল ওয়াকরাহ খেলবে আল জানুবে।
আগামী বিশ্বকাপে জায়গা করে নেয়ার জন্য এখন থেকেই প্রশিক্ষণ শুরু করবে কাতারের জাতীয় ফুটবল দল। তাই প্রশিক্ষণের জন্য খলিফা আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামকে ব্যবহার করা হবে। আর বাকি স্টেডিয়ামগুলো নতুন করে গড়া হবে। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে শুরু হওয়া এশিয়ান কাপের জন্য স্টেডিয়ামগুলো ব্যবহার করা হতে পারে বলে কাতার প্রশাসন সূত্রের খবর।