ভয়েস এশিয়ান, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২২।। দীর্ঘ ১৯ বছর পর দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলে শ্রেষ্ঠত্বের আসন গ্রহণ করল বাংলাদেশের নারী ফুটবলাররা। হিমালয়কন্যা নেপালে তাদের এই দারুণ অর্জনে, আনন্দে ভাসছে খেলোয়াড়-কোচিং স্টাফসহ পুরো দেশ।
ইতিহাস গড়া বাংলার নারী ফুটবলাররা বুধবার দেশে ফিরছেন। তাদের এই ঘরে ফেরা রাঙাতে প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার, দেশের মানুষ। তাদের জন্য ছাদখোলা বাসের ব্যবস্থা করছে সরকারের পরিবহন সংস্থা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি)।
নারী ফুটবল দলের সদস্য সানজিদা আখতারের নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া পোস্টে সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল নিয়ে সানজিদা লেখেন, ‘যারা আমাদের এই স্বপ্নকে আলিঙ্গন করতে উৎসুক হয়ে আছেন, সেই সকল স্বপ্নসারথিদের জন্য এটি আমরা জিততে চাই। নিরঙ্কুশ সমর্থনের প্রতিদান আমরা দিতে চাই। ছাদখোলা চ্যাম্পিয়ন বাসে ট্রফি নিয়ে না দাঁড়ালেও চলবে, সমাজের টিপ্পনীকে একপাশে রেখে যে মানুষগুলো আমাদের সবুজ ঘাস ছোঁয়াতে সাহায্য করেছে, তাদের জন্য এটি জিততে চাই। আমাদের এই সাফল্য হয়তো আরো নতুন কিছু সাবিনা, কৃষ্ণা, মারিয়া পেতে সাহায্য করবে। অনুজদের বন্ধুর এই রাস্তাটুকু কিছু হলেও সহজ করে দিয়ে যেতে চাই।'
নেপালের সঙ্গে ফাইনালের আগে নারী ফুটবল দলের তারকা কৃষ্ণা রানী ফেসবুকে ছাদখোলা বাসে শিরোপা উদ্যাপনের একটি ছবি পোস্ট করে লেখেন, ‘এমন মুহূর্তের অপেক্ষায়।’
ফেসবুক পোস্ট দুইটি ঘিরে আলোড়ন ছড়িয়ে যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। সানজিদার আবেগঘন ও জয় ছিনিয়ে আনার দৃঢ়তা প্রশংসিত হয় স্ট্যাটাসটির সর্বত্র। একটি স্ট্যাটাসে উঠে আসে নারীর সংগ্রামের চিত্রও। সামাজিক নানা প্রতিবন্ধকতা, টিপ্পনী উপেক্ষা করে ট্রফি জয়ের স্বপ্ন পৌঁছে যায় মহাকাব্যিক দ্যোতনায়।
সানজিদা-কৃষ্ণার স্ট্যাটাস ছুঁয়ে যায় পুরো দেশকে। এই কথাগুলোর মাঝে লুকিয়ে ছিল দীর্ঘ লড়াইয়ে গল্প। সঙ্গে আক্ষেপ।
নারী ফুটবলারদের সেই জেদ দক্ষিণ এশিয়ার সেরা বানিয়েছে সাবিনা-মারিয়াদের। সানজিদার ছাদখোলা বাসের বিষয়টি নজরে পড়েছে ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেলের। সেভাবেই বরণের কথাও নিশ্চিত করেছেন তিনি।
গতকাল সোমবার ম্যাচ শেষে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘সাবিনাদের আক্ষেপ দেখে আমাদের অন্তরে ব্যথা লেগেছে। আমাদের দেশে যদিও ছাদখোলা কোনো বাস নেই ঢাকায়, তারপরও আমরা তাদের জন্য একটা ব্যবস্থা করেছি। তাদের ছাদখোলা বাসে বিমানবন্দর থেকেই সংবর্ধনা আমরা দেব। হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বাফুফে ভবন পর্যন্ত তাদের আমরা নিয়ে যাব। তাদের মনের আশা পূরণ করব।’
বুধবার কৃষ্ণা ও সানজিদারা যখন বাংলাদেশে ফিরবেন, তখন বিমানবন্দরে তাদের অভ্যর্থনা জানাবেন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের কর্তারা। সড়কেও হয়তো থাকবেন ফুটবলপ্রেমীরা। তাদের অভিবাদনের জবাব নারী ফুটবলাররা ছাদখোলা বাস থেকেই দিতে পারবেন।
বিআরটিসির সূত্র জানায়, নারী ফুটবল দল চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরই ক্রীড়া মন্ত্রণালয় ছাদখোলা বাসের আক্ষেপ ঘোচানোর পরিকল্পনা নেয়। তারা বিআরটিসির সঙ্গে গতকাল রাতেই যোগাযোগ করে। বিআরটিসি কোনো রকম দ্বিধা না করেই সংস্থার একটি বাসের ছাদ কেটে নারী ফুটবল দলের দেশে ফেরার উদ্যাপনটি রাঙাতে তৎপর হয়।
বিআরটিসির মতিঝিল ডিপোর একটি ডাবল ডেকার বাসের ছাদ কাটা শুরু হয় মঙ্গলবার সকাল থেকে। আজকের মধ্যেই বাসটি পুরোপুরি প্রস্তুত হয়ে যাবে বলে জানান মতিঝিল ডিপোর কর্মকর্তারা।
বিআরটিসির চেয়ারম্যান মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ‘নারী ফুটবল দল জাতিকে একটা বড় উপহার দিয়েছে। জাতি তাদের কাছে
কৃতজ্ঞ। আমরা তাদের উদ্যাপনে সঙ্গী হতে পেরে গর্বিত।’
তিনি আরও বলেন, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় প্রস্তাব দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তারা কাজ শুরু করেছেন। মঙ্গলবার রাতের মধ্যে বাস পুরোপুরি প্রস্তুত হয়ে যাবে। এই প্রচেষ্টা নারী ফুটবল দল ও ফুটবলপ্রেমীদের জন্য কিছুটা হলেও আনন্দ দেবে বলে আশা করছেন তিনি।