ভয়েস এশিয়ান, ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১।। পাপুল অধ্যায় শেষ না হতেই লক্ষ্মীপুর-২ (রায়পুর ও সদরের একাংশ) আসনে উপনির্বাচনের ডামাডোল বেজে উঠেছে। কুয়েতে সাজা পাওয়া আলোচিত সংসদ সদস্য (এমপি) কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলের পদ শূন্য ঘোষণা করা হয়েছে সোমবার। আর তাতেই এমপি হওয়ার স্বপ্নে বিভোর ডজনখানেক প্রার্থী। এর মধ্যে জনবিচ্ছিন্ন একাধিক নেতাও রয়েছেন।
ফেসবুক ঘেঁটে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির অন্তত ডজনখানেক নেতার অনুসারীরা আগাম প্রচারণা শুরু করে দিয়েছেন। পোস্টারে নেতার রঙিন ছবি জুড়ে দিয়ে তারা লক্ষ্মীপুর-২ আসনের জনগণকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন।

এর মধ্যে রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নুরউদ্দিন চৌধুরী নয়ন, সাবেক এমপি হারুনুর রশিদ, জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক এহসানুল কবির জগলুল, কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ আলী খোকন, বর্তমান কমিটির পরিবেশবিষয়ক উপসম্পাদক সামছুল ইসলাম পাটওয়ারী, জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান, রায়পুর উপজেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক হারুনের রশীদ। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা তাদের পক্ষে বিক্ষিপ্তভাবে প্রচারণা চালাচ্ছেন। ফেসবুক স্ট্যাটাসের পাশাপাশি এরই মধ্যে ওই নেতাদের পোস্টার-ফেস্টুনও বিভিন্ন এলাকায় সাঁটিয়েছেন।
অন্যদিকে বিএনপির নেতাকর্মীরা সাবেক এমপি আবুল খায়ের ভূঁইয়ার পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন, যদিও এ সংখ্যা খুবই কম। গেল নির্বাচনেও তিনি এ আসনে ‘ধানের শীষ’ নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। সাবেক দুইবারের এমপি খায়ের ভূঁইয়া বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি। এছাড়া জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক এম আর মাসুদ ও নোয়াখালী জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক বোরহান উদ্দিন মিঠু সম্ভাব্য প্রার্থী।
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নাটকীয়ভাবে কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল এমপি নির্বাচিত হন। রাজনীতির বাইরে থাকা ‘টাকার সাগর’ নামে খ্যাত এই ব্যক্তি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর ভর করে তখন স্বতন্ত্র এমপি হয়েছিলেন। কুয়েতে পাপুলের নামে ২০২০ সালের শুরুতে মানব ও মুদ্রা পাচারের অভিযোগ ওঠে। পরে একই বছরের ৬ জুন ওই মামলায় কুয়েতে পাপুল গ্রেপ্তার হন। গত ২৮ জানুয়ারি ওই দেশের ফৌজদারি আদালত পাপুলকে চার বছর কারাদণ্ড দেন। পাশাপাশি ৫৩ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়। তার স্ত্রী সেলিনা ইসলামও কুমিল্লার সংরক্ষিত আসনের স্বতন্ত্র এমপি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে রায়পুরের তিন ইউপি চেয়ারম্যান জানান, আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ ডজনখানেক নেতা এমপি পদে উপনির্বাচনে প্রার্থী হতে অনুসারীদের দিয়ে প্রচারণা শুরু করেছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই জনবিচ্ছিন্ন ও বিতর্কিত নেতা। নির্বাচন এলেই তাঁদের এলাকায় দেখা যায়। এরপর তারা হারিয়ে যান।
রায়পুরের সন্তান নোয়াখালী জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক বোরহান উদ্দিন মিঠু বলেন, রায়পুরে জনগণ বরাবরই উন্নয়নবঞ্চিত। এখন উপনির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। দল থেকে আমি মনোনয়ন চাইব।

লক্ষ্মীপুর আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান বলেন, আগামীতে আমরা অপরাজনীতিমুক্ত, কালোটাকার মালিক ও জনবিচ্ছিন্ন কাউকে এমপি পদে দেখতে চাই না। পরীক্ষিত ও তৃণমূলে বসবাসকারী নেতা আওয়ামী লীগের এমপি মনোনয়ন পাবেন বলে আমরা প্রত্যাশা করি।
কেন্দ্রীয় যুবলীগের পরিবেশবিষয়ক উপসম্পাদক সামছুল ইসলাম পাটওয়ারী বলেন, ‘পাপুলের কারণে আমরা আন্তর্জাতিকভাবে লজ্জিত হয়েছি। এ রকম লজ্জায় আমরা আর পড়তে চাই না। এ আসনে আওয়ামী লীগের ত্যাগী ও যোগ্যদের মধ্যে এমপি পদে প্রত্যাশা করছি, যিনি নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করে আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করবেন।’
জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নুরউদ্দিন চৌধুরী নয়ন বলেন, ‘পাপুলের অনুপস্থিতিতে প্রশাসনিক কার্যক্রম ও উন্নয়ন ব্যাহত হয়েছে। এখন উপনির্বাচনের বিষয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্র থেকে সিদ্ধান্ত আসা সময়ের ব্যাপার। আমাদের দলের নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ আছেন।’