ভয়েস এশিয়ান, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২০।। প্রিয় জন্মভূমিকে স্বাধীন করতে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন দেশের আপামর জনতা। তাদের সঙ্গে অস্ত্র হাতে
যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন শোবিজ অঙ্গনের মানুষেরাও। এমনই চার তারকার গল্প নিয়ে এই আয়োজন
আমি প্রথমত একজন মুক্তিযোদ্ধা
নাসির উদ্দীন ইউসুফ, নির্মাতা
আমি প্রথমত একজন মুক্তিযোদ্ধা, তারপর নির্মাতা। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আমার দুটি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। একটি ‘গেরিলা’, অন্যটি ‘একাত্তরের যীশু’। এর মধ্যে দ্বিতীয়টি প্রামাণ্য চলচ্চিত্র। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়াটা আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ ঘটনা। ২৬ মার্চের পরই আমি আগরতলায় চলে যাই প্রশিক্ষণ নিতে। তারপর দেশে এসে গেরিলাযুদ্ধে অংশ নিই। দ্বিধাহীন কণ্ঠে বলতে ভালোবাসি, আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা।
জেদ চেপেছিল, শেষ দেখব
আকবর পাঠান ফারুক, অভিনেতা
যে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ দেখেনি, সে স্বাধীনতাযুদ্ধ দেখেনি। সেদিন বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ৩২ নম্বরে দেখা করতে গিয়েছিলাম, কিন্তু দেখা পাইনি। তিনি সবাইকে জানিয়ে দিলেন যার যার জায়গায় চলে যেতে। এরই মধ্যে পাকিস্তানি সেনারা রোকেয়া হল, পুলিশ লাইনস তছনছ করে ফেলেছে। নির্বিচারে গণহত্যা করছে। বিভিন্ন হল থেকে সিনেমা দেখে যারা বের হয়েছে, তাদের অধিকাংশকেই মেরে ফেলা হয়েছে। এ সময় আমরা মনোবল হারিয়ে ফেলি। তারপরও মনে জেদ চেপেছিল, শেষ দেখব। কারণ বঙ্গবন্ধুকে কথা দিয়েছি। তাই অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছিলাম। আমি কম করে হলেও ২০০ ইপিআর সদস্যকে বাঁচিয়েছি। আরও অনেক স্মৃতি আর ইতিহাস আছে মুক্তিযুদ্ধের। যেটুকু বললাম এটুকু অতি সামান্য।
৯ নম্বর সেক্টরে যুদ্ধ করেছি
জিয়াউল হাসান কিসলু, অভিনেতা
মুক্তিযুদ্ধে আমি ৯ নম্বর সেক্টরে যুদ্ধ করেছি। সেক্টর কমান্ডার ছিলেন মেজর জলিল। আমরা তো আসলে একটা চেতনার জায়গা থেকে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলাম। সেই চেতনার বাস্তবায়ন করতে হলে আমাদের আরও সংগ্রাম করতে হবে। একটা সাম্যবাদী রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখেছিলাম। যেখানে গরিব-ধনী সবার দেশ হবে বাংলাদেশ। কিন্তু এখন আমরা দেখি শুধু একটা শ্রেণিই ফুলে ফেঁপে উঠছে। অন্যদিকে অনেক মানুষ এখনো দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে। এটা কাম্য নয়। তবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে এটা ভালো খবর। সমতার ভিত্তিতে সব নাগরিক, সব জাতি-সম্প্রদায় মিলে পারস্পরিক সৌহার্দ্যরে ভিত্তিতে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে এটাই চাওয়া। স্বাধীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় যারা থাকবেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করেই দেশকে এগিয়ে নেওয়ার কাজ করবেন।
স্বপ্ন কিন্তু আজও পূরণ হয়নি
সুজেয় শ্যাম, সংগীতজ্ঞ
যে স্বপ্ন নিয়ে আমরা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের মাধ্যমে দেশকে স্বাধীন করেছিলাম, সেই স্বপ্ন কিন্তু আজও পূরণ হয়নি। রাজাকাররা মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে যেমন ঐক্যবদ্ধ ছিল, ঠিক তেমনি তারা এত বছর পরও ঐক্যবদ্ধ আছে। কিন্তু আমরা যারা দেশ স্বাধীন করার চেতনা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলাম, তারা নানাভাবে নানা নামে বিভিন্ন সংগঠনের মাধ্যমে বিভক্ত হয়ে গেছি। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করে আমরা ইতিহাস রচনা করছি। এসব দেখে সত্যিই খুব কষ্ট হয়। আমরা মুখে বলি বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসি, কিন্তু অনেকেই তা অন্তরে লালন করি না। আমরা অনেকেই নিজেদের স্বার্থের দিকেই বেশি খেয়াল রাখছি, যা আদৌ উচিত নয়। আমি রাজনীতি করি না, তবে সত্যিকার অর্থে মন থেকে ভালোবাসি বঙ্গবন্ধুকে। তিনি যে সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখেছিলেন, সেই স্বপ্ন হয়তো এক দিন পূরণ হবে আর তা হয়তো হবে বর্তমান প্রজন্মের হাত দিয়েই। আমরা হয়তো দেখে যেতে পারব না। তবে এই শান্তি নিয়ে যেন মরতে পারি, বাংলাদেশ সোনার বাংলার পথে এগিয়ে যাচ্ছে।