ভয়েস এশিয়ান, ২০ এপ্রিল, ২০২০।। সৌদি আরবের শীর্ষ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকানোর স্বার্থে আসন্ন রমজান মাসে এক জায়গায় জমায়েত হয়ে নামাজ পড়া বা ইফতার করা এড়িয়ে চলার জন্য বিশ্বের মুসলিমদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। রবিবার সরকার নিয়ন্ত্রিত সৌদি প্রেস এজেন্সির খবরে বলা হয়, দেশটির ঊর্ধ্বতন আলেমদের কাউন্সিল বলেছে, যেহেতু এক জায়গায় অনেক লোকের সমাগমই সংক্রমণ ছড়ানোর প্রধান কারণ, তাই মুসলিমদের উচিত হবে এমন জমায়েত এড়িয়ে চলা।
সুন্নিসংখ্যাগরিষ্ঠ সৌদি আরব করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকানোর চেষ্টায় মক্কা ও মদিনায় অবস্থিত মুসলিমদের পবিত্রতম মসজিদসহ দেশের মসজিদগুলো বন্ধ করে দেওয়াসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। ২০ মার্চ মুসলমানদের সবচেয়ে পবিত্র দুটি স্থান মক্কা ও মদিনায় অবস্থিত দুই মসজিদের বাইরের চত্বরে নামাজ পড়া স্থগিত করা হয়।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সৌদি আরব কর্তৃপক্ষ এ ব্যবস্থা নেয় বলে জানানো হয়। মসজিদ চত্ত্বরে প্রতিদিনের নামাজের পাশাপাশি জুমার নামাজও স্থগিত করা হয়।
সৌদি আরবে করোনাভাইরাসে কমপক্ষে ৪ হাজার ৯০০ জন আক্রান্ত হয়েছেন এবং গত ১৪ এপ্রিলের হিসাব অনুযায়ী সেখানে ৬৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।
সৌদি আরবের জেনারেল সেক্রেটারিয়েট অব দ্য কাউন্সিল অব সিনিয়র স্কলার্স কর্তৃপক্ষ বিশ্বের মুসলমানদের জন্য কয়েকটি সুপারিশ পালনের আহ্বান জানিয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে, করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে নিজ নিজ দেশের সরকারের জারি করার সিদ্ধান্ত মেনে চলা, সরকার যদি পরামর্শ দেয় তাহলে তারাবিহসহ সব নামাজ বাড়িতে পড়া, সেহরি ও ইফতারের সময় সামাজিক জমায়েত এড়িয়ে চলা।
এর আগে শুক্রবার সৌদি আরবের গ্র্যান্ড মুফতি শেখ আব্দুলআজিজ আল-শেখ বলেছেন, করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকানোর প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ হিসেবে যদি মসজিদে নামাজ আদায় করা না যায় তাহলে রমজানের তাবাবিহ নামাজ বাড়িতে পড়া যাবে। তিনি আরও বলেন, ইদের নামাজের ক্ষেত্রেও এটি প্রযোজ্য।
এদিকে পাকিস্তানে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ছড়ানো রোধ করার চেষ্টায় মসজিদে এসে নামাজ পড়া বন্ধ রাখতে কর্তৃপক্ষ চেষ্টা করলেও দেশটির কোথাও কোথাও ধর্মীয় নেতারা তা অমান্য করা শুরু করেছিলেন। এরই মধ্যে শনিবার পাকিস্তানে প্রেসিডেন্ট এবং দেশটির শীর্ষস্থানীয় কিছু ধর্মীয় নেতা একমত হয়েছেন যে, আসন্ন রমজান মাসে দেশটির মসজিদগুলো খোলা রাখা যেতে পারে, যদি স্বাস্থ্য নীতিমালা মেনে চলা হয়। ইসলামাবাদে দীর্ঘ এক বৈঠকের পর এ ঐকমত্য হয়।
এসব নিয়মকানুনের মধ্যে আছে: নামাজ পড়তে আসা লোকদের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, ফেসমাস্ক পরা এবং যেখানে সম্ভব বাইরে নামাজ পড়া। তা ছাড়া বয়স্ক ও অসুস্থ লোকদের মসজিদে আসা উচিত হবে না বলেও উল্লেখ করা হয়।
আগামী সপ্তাহ থেকে রমজান মাস শুরু হওয়ার আগে পাকিস্তানের কর্তৃপক্ষ দৃশ্যত ধর্মীয় ঐতিহ্য এবং করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে আরোপ করা বিধিনিষেধের মধ্যে একটা ভারসাম্য আনার চেষ্টা করছে।
অন্যদিকে শিয়া প্রধান ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি বলেছেন, যদি স্বাস্থ্যগত ক্ষতির ঝুঁকি থাকে তাহলে মুসলিমদের জন্য রমজান মাসে রোজা রাখাটাও বাধ্যতামূলক নয়।
ইরানে সরকারি তথ্য অনুযায়ী কমপক্ষে ৭৪ হাজার লোক করোনাভাইরাস সংক্রমণে আক্রান্ত হয়েছেন এবং ৪ হাজার ৬৮০ জনেরও বেশি লোক মারা গেছেন। সূত্র: বিবিসি বাংলা।