ভয়েস এশিয়ান, ২৩ মার্চ, ২০২২।। সাউথ আফ্রিকা সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে সম্ভাবনা তৈরি হয় ইতিহাস গড়ার। তাতে নতুন অধ্যায় যুক্ত হলো শেষ ম্যাচে।
তিন ম্যাচ সিরিজের শেষ ওয়ানডেতে বাংলাদেশ বাগিয়ে নিয়েছে ৯ উইকেটের বড় জয়। আর তাতে প্রথমবারের মতো সাউথ আফ্রিকার মাটিতে তাদের হারিয়ে ঐতিহাসিক সিরিজ জয় করল বাংলাদেশের।
বাংলাদেশ ঐতিহাসিক সিরিজ জয়ের ভিত গড়ে নেয় প্রথম ইনিংসেই। তাসকিন আহমেদ তার বোলিং তোপে গুড়িয়ে দেন প্রোটিয়াদের দুর্দান্ত ব্যাটিং লাইনআপ। আর সেই সুবাদে বাংলাদেশের সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় ১৫৫ রানের।
সহজ লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুতে বিপদের হাত থেকে রক্ষা পায় বাংলাদেশ। ইনিংসের চতুর্থ বলে কাগিসোর রাবাডার ডেলিভারিতে ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন এক রান করা লিটন দাস।
ভাগ্য লিটনের পক্ষে থাকায় সে যাত্রায় বেঁচে যান তিনি। পয়েন্টে কেশভ মহারাজের হাত ফসকে যায় ক্যাচ। আর জীবন পান লিটন।
জীবন পেয়ে সতর্ক হয়ে ওঠেন তিনি। দেখেশুনে খেলেন। সঙ্গী তামিমকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন দলকে।
বড় জয়ের দিকে দলকে এগিয়ে দেয়ার পথে ৫২ বলে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৫২তম অর্ধশতক তুলে নেন। সেই সঙ্গে ব্যাট ছোটান শতকের দিকে।
সঙ্গী লিটনও কম যাচ্ছিলেন না। ফিফটি থেকে দুই রান দূরে থাকতেই কেশভ মহারাজের শিকার হয়ে ফিরতে হয় তাকে।
বাকি কাজটা শেষ করেন তামিম ও সাকিব মিলে। দলকে এনে দেন ৯ উইকেটের ঐতিহাসিক এক জয়।
তামিম অপরাজিত থাকেন ৮৭ রানে আর সাকিব অপরাজিত থাকেন ১৮ রান করে।
এর আগে সেঞ্চুরিয়নে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ১৫৪ রানে গুটিয়ে যায় স্বাগতিক দল।
ভালো শুরুর পর প্রোটিয়াদের ব্যাটিং লাইনআপ ধসিয়ে দেন তাসকিন আহমেদ। তার ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ৫ উইকেট শিকারে দিশেহারা হয়ে পড়েন স্বাগতিক দলের ব্যাটাররা।
তৃতীয় ওয়ানডেতে বাংলাদেশের বিপক্ষে সাউথ আফ্রিকাকে দারুণ শুরু এনে দেন দুই ওপেনার। ওভারপ্রতি ৭-এর কাছাকাছি রান তোলেন দুজন।
সে ছন্দে ব্যাঘাত ঘটান মেহেদী মিরাজ। ১২ রান করা কুইন্টন ডি কককে ফিরিয়ে ব্রেক থ্রু দেন বাংলাদেশকে।
টস জিতে ব্যাট করতে নেমে সেঞ্চুরিয়নে ঝড়ো শুরু করেন দুই প্রোটিয়া ওপেনার ইয়ানেমান মালান ও কুইন্টন ডি কক। ৬ ওভারে তারা রান যোগ করেন ৪০। তবে সপ্তম ওভারে বল হাতে হিসাব পাল্টে দেন মেহেদী মিরাজ।
ওভারের পঞ্চম বলে তাকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে লং অফে মাহমুদুল্লাহর ক্যাচে পরিণত হন অভিজ্ঞ ডি কক। ৮ বলে ১২ রান করেন তিনি।
সঙ্গী হারিয়ে কিছুটা সতর্ক হন মালান। কাইল ভেরেইনকে নিয়ে জুটি বড় করার লক্ষ্যে ব্যাট করতে থাকেন।
১৩তম ওভারে ভেরেইনকে আউট করে সাউথ আফ্রিকাকে দ্বিতীয় ধাক্কা দেন তাসকিন আহমেদ। ৯ রান করা ভেরেইন তাসকিনের বলে বোল্ড হন।
নিজের চতুর্থ ও ইনিংসের ১৫তম ওভারে আবারও আঘাত করেন তাসকিন। বিপজ্জনক হয়ে উঠতে থাকা মালানকে তিনি আউট করেন। মুশফিকুর রহিমের হাতে ধরা পড়ার আগে মালান করেন ৩৯ রান।
জোড়া ধাক্কা সামলে নেয়ার আগে প্রোটিয়া শিবিরে আঘাত করেন সাকিব আল হাসান। টেম্বা বাভুমাকে ২ রানে এলবিডব্লিউ করেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার।
এরপরও স্বাগতিকদের স্বস্তি দেননি টাইগাররা। রাসি ফন ডার ডুসেনকে ৪ রানে প্যাভিলিয়নে ফেরান শরীফুল ইসলাম।
তাসকিন তার তৃতীয় উইকেট তুলে নেন ডুয়েইন প্রিটোরিয়াসকে ফিরিয়ে। ২০ রান করে আউট হন এ অলরাউন্ডার।
১৬ রান করা ডেভিড মিলারকেও আউট করেন তাসকিন। আর ৪ রান করা কাগিসো রাবাডাকে আউট করে ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়বারের মতো ইনিংসে ৫ উইকেট নেন এ পেইসার।
ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম ম্যাচে ২০১৪ সালে ভারতের বিপক্ষে ইনিংসে ৫ উইকেট পান তাসকিন। এর ৮ বছর পর পেলেন দ্বিতীয় ৫ উইকেট।
বাকি কাজটুকু সারেন সাকিব। লুঙ্গি এনগিডিকে শূন্য রানে আউট করেন। আর শেষ ব্যাটার হিসেবে ২৮ রানে রানআউট হন কেশাভ মহারাজ।
৩৭ ওভারে ১৫৪ রানে গুটিয়ে যায় স্বাগতিক দল। এটাই ওয়ানডেতে বাংলাদেশের বিপক্ষে সাউথ আফ্রিকার সর্বনিম্ন সংগ্রহ।
তাসকিন ছিলেন সবচেয়ে সফল বোলার। ৩৫ রানে ৫ উইকেট নেন তিনি। সাকিব ২টি ও শরীফুল ও মিরাজ ১টি করে উইকেট নেন।